বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান



ভূমিকাঃ 

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ  বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা।  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও  বঙ্গবন্ধু সমার্থন ছিল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সম্মোহনী নেতৃত্বের অধিকারী। সম্মোহনী নেতৃত্বের গুনে বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়। তার দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের কারনে বাঙালিরা মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতা অর্জন করে। কাজেই মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল অপরিহার্য। 

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাঃ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পাকিস্তান বিভক্তি পর্যন্ত নেতৃত্ব ছিল অপরিহার্য। পূর্ব বাংলার জনমানুষের মুক্তির জন্য তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর আন্দোলন ওসংগ্রাম চালিয়েছেন। নিচে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধে অবদান আলোচনা করা হলোঃ


১. ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুঃ ১৯৫২  সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলভিত্তি। ভাষা আন্দোলনের সময় ১৬-২৭ ফেব্রয়ারি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে গ্রেফতার হন এবং কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অধিকার আদায়ে লিপ্ত হন।
২. যুক্তফ্রন্ট বিজয়ে বঙ্গবন্ধুঃ ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগ শোচনীয়ভাবে যুক্তফ্রন্টের কাছে


পরাজিত হয়। যুক্তফ্রন্ট ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠন করে নির্বাচনের পর এ. কে. ফজলুল হককে বন্দি করা হলে শেষ মুজিবুর রহমান মূল নেতৃত্বে চলে আসেন। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় তিনি কৃষি, বন ও সমবায়মন্ত্রী ছিলেন।  পূর্ববাংলার অধিকার রক্ষায় পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। 
৩. বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ছয়দফা দাবি উপস্থাপনঃ ছয়দফা দাবি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। ছয়দফা কর্মসূচি পূর্ব বাংলার জনগণের প্রানের দাবি ছিল। সকল বাঙালি ছয় দফাকে সমর্থন করে।  ছয়দফা দাবি পূর্ব বাংলার জোরালো হলে পাকিস্তান সরকার ভীতসন্ত্রস হয়ে পড়ে। ছয়দফা দমনের জন্য পাকিস্তান সরকার দমন ও নিপীড়ন করে।  শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করে। কিন্তু পূর্ব বাংলার ছাত্রজনতা বঙ্গবন্ধু মুক্তির দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা।  ছয়দফা দাবি এতই জনপ্রিয় দাবি ছিল যে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। তিনি পূর্ব বাংলায় জনগণের ব্যাপক আনুগত্য লাভে সমর্থ হন। 


৪. আগরতলা মামলাঃ ছয়দফা আন্দোলন যখন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন পরিনত হয় তখন ছয়দফাকে পাকিস্তান সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে অভিহিত করে ।  শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ১৯৬৮ সালে আগরতলা মামলা দায়ের করে। আগরতলা মামলায় "শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হলে পূর্ব বাংলার আপামর জনতা" শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে।  শেখ মুজিবুর রহমান পরিনত হয় বাংলার মুক্তিদাতা হিসেবে। 


৫. আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনঃ ১৯৬৯ সালের আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলন বাংলার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইয়ুব খানের পতন স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের পথ প্রশস্ত হয়। এ গণআন্দোলন শেখ মুজিবকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে।  গণআন্দোলনে আইয়ুব খানের বিদায় ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা বিজয় ।  গণআন্দোলনের ফলে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করলে ২৩ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ সালে রেসকোর্স ময়দানে তাকে বঙ্গবন্ধু উপাদিতে ভূষিত করা হয়।

 
৬. আওয়ামী লীগের নেতৃত্বঃ পাকিস্তানের সরকার বিরোধী আন্দোলনে মূল ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগ।  শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।  আওয়ামী লীগ বংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রামে অগ্রনী ভূমিকা রাখে। শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 


৭. '৭০ এর নির্বচন ও বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব ঃ '৭০ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তান ভাঙনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ।  বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বচনে অংশগ্রহণ করে এবং জাতীয় ও প্রেদেশিক নির্বচনে অংশগ্রহণ করে এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে এ বিজয় বাঙালি জাতির স্বাধীনতার দাবি জোরালো করে।  ১৯৭০ সালের নির্বচনে  আওয়ামী লীগের এ বিজয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । 


৮. অসহযোগ আন্দোলনঃ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে পাকিস্তান সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।  তারা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহালা শুরু করে।  অহেতুক সময় ক্ষেপন করে। বঙ্গবন্ধু ছয়দফার দাবিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে অটল থাকেন।  রাজনৈতিক সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে।  বাঙালি অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু অটল থাকেন।  ফলে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনিদিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।  এ রূপ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।  পূর্ব বাংলায় সর্বত্র জনগন এক অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলে,  অসহযোগ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু মুখ্য ভূমিকা ও নেতৃত্ব প্রদান করে।


৯. মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বঃ 

বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেন দক্ষভাবে।  তিনি ৭  মার্চ ভাষনে পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য মুক্তির দিক নির্দেশনামূলক ভাষন দেন এবং মুক্তিসংগ্রামে সকলকে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।  ৭  মার্চ ভাষনের পর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।  ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর গনহত্যা শুরু করলে ২৬  মার্চ প্রথম প্রহরে ১২ টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্বাধীনতার ঘোষণা পর পূর্ব বাংলার সংগ্রামী জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।  ২৬ মার্চ প্রথম প্রহর অর্থাং ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১ টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার দিকে নির্দেশনা মোতাবেক মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনা করে এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। 


উপসংহারঃ

  পরিশেষে বলা যায় যে,  স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও নেতৃত্ব ছিল অপরিহার্য। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও দাবি আদায়ে বঙ্গবন্ধু একাধিক বার কারাবরণ করেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর সম্মোহনী নেতৃত্ব ও বলিশ্ঠ পদক্ষেপ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অপরিহার্য ছিল।