নাথ সাহিত্য : প্রাচীন বাংলার সাহিত্যের অন্যতম অধ্যায়

 নাথ সাহিত্য : প্রাচীন বাংলার সাহিত্যের অন্যতম অধ্যায় 


নাথ সাহিত্য : প্রাচীন বাংলার সাহিত্যের অন্যতম অধ্যায়





জীবনানন্দ দাস একসময় বলেছিলেন: ''শ্রেষ্ঠ ধর্মসাধনা এমনকি শ্রেষ্ঠ শিল্পসাধনা কি তা নয় যা বহুর স্খলন এবং ক্ষরণ এবং অসামঞ্জস্যের বিষয় থেকে ধীরে ধীরে জ্যামিতির- এবং যেখানে মহত্তর জ্যামিতি নয় শুধু সমন্বয় ও সৌন্দর্য খুঁজে নিতে পারে?'' 








নাথ সাহিত্য কী? 





প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের নির্দশন বৌদ্ধগণ ও দোহার ভাষারূপে পরিচয় মেলে নাথসাহিত্যের। উভয় ধারার সাহিত্যই বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের উল্লেখ রয়েছে। এইসব সিদ্ধপুরুষ হচ্ছেন মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ, জলান্ধরীপাদ বা হাড়িপা, গোরক্ষনাথ বা গোরখনাথ এবং কানুপা বা কাহপাদ। এদের সময় ও স্থানিক সম্পর্কে পন্ডিতগণ একমত নন। 











                                       নাথ সাহিত্যের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ 






নাথপন্থী সাধকেরা একটা বিশেষ ধর্মকর্মের সঙ্গে যুক্ত। যোগসাধনাই সেই ধর্মের মূল প্রেরণা। এজন্য নাথপন্থী সাধকদের যোগী বলা হয়। নাথধর্মের সঙ্গে চর্যাপদের সহজপন্থী ধর্মমতের হয়তো কিছু প্রভেদ আছে,কিন্তু মিলটি সেই পরিমাণে কম নয়। এ সম্পর্কে মণীন্দ্রমোহন বসুর মন্তব্য,



"প্রকৃতপক্ষে এই সকল ধর্মমত একই উৎস হইতে উৎপন্ন হইয়া বিভিন্ন ভাবধারায় পরিপুষ্টি লাভ করিয়া বিশিষ্টতাসম্পন্ন হইয়াছে। নাথ অর্থে "সদগুরুনাথ" এবং গুরু বুঝাইতে এই শব্দটি চর্য্যাতেও ব্যবহৃত হইয়াছে,যথা "ভক্তি ন পুচ্ছসি নাহ" এই গুরুপরম্পরায় প্রচারিত বিশিষ্ট মতবাদই নাথ-ধর্মেরও বিশেষত্ব। চর্যাতেও ধর্মার্থে গুরুকেই অনুসরণ করিতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। তাহা হইলে এই দুই মতবাদের বিভিন্নতা কোথায়?" 








দশম শতাদ্বীতে সারা নাথপন্থীদের বিচরণক্ষেত্র ছিলো। হাজার বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসেও নাথপন্থী যোগীদের সাধনভোজনের কাহিনী শ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এদেশের ছড়াপাঁচালি, লোকগীতি ও কিছু কিছু আখ্যানকাব্যে নাথপন্থী যোগীদের ধর্মকর্ম ও আচার-আচরণের অনেক চিত্তাকর্ষক কাহিনীকে রূপদান করা হয়েছে। 




জনচিত্ত আকর্ষণকারী ময়নামতি ও গোপীচন্দ্রের গান এবং গোরক্ষবিজয়-কাহিনী এই নাথসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। এই সব কাহিনী দশম-দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত হলেও পরবর্তীকালে একই বিষয়ের ভিত্তিমূলে উৎপন্ন অনেক ছড়াগান উত্তরবঙ্গের কৃষকদের মুখে মুখে প্রচলিত হয়। কাজেই এসব ছড়ায় প্রাচীন ভাষাবৈশিষ্ঠর পরিচয় নয়। 








প্রাচীন বাংলার সাহিত্যের নির্দশন বৌদ্ধগান ও দোহার ভাষারূপের পরিচয় মেলে নাথসাহিত্যের। উভয় ধারার সাহিত্যেই বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের উল্লেখ রয়েছে। এইসব সিদ্ধপুরুষ হচ্ছেন মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ, জলান্ধরীপাদ বা হাড়িপা, গোরক্ষনাথ বা গোরখনাথ এবং কানুপা বা কাহ্নপাদ। এঁদের সময় ও স্থানিক অবস্থান সম্পর্কে পণ্ডিতগণ একমত নন।

 




বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে শৈব ধর্মের সম্মিলনে যে নাথধর্মের প্রসার লাভ করেছিল, তারই যোগমাহাত্ম্য ও কাহিনী অবলম্বনে নাথসাহিত্যের বিকাশ ঘটে।










                                                  নাথযোগী সম্প্রদায়







শৈবাদী বলে পন্ডিতজনের অনুমান; রুদ্রাক্ষ, ত্রিপুন্ড চিহ্ন, ত্রিশূল, শিবরাত্রি উৎসব ইত্যাদি অনুষঙ্গ ছাড়াও দেখা যায় শিব এদের আদিগুরু বা আদিনাথ। তবু এই সম্প্রদায়ের 'নাথ' নামকরণ ইতিহাস অস্পষ্ট। এরা জানেন, ''গুরু সাচা পিন্ডিকাচা'', সদগুরু ভজিল তবে আত্নমা পরিচয়। তন্ত্রের প্রভাবে কৌলমাগী রূপেও এঁরা এক সময় সম্মানিত হয়েছিলেন। তন্ত্র ও যোগধর্ম দেহাশ্রিত— “ব্রহ্মাণ্ডে যে গুণাঃ সন্তি তে তিষ্ঠ্যন্তি কলেবরে।” যোগের মূল কথা, মানবদেহ ও মন। যোগীর কাছে “পিশুপাতে চ য মোক্ষঃ স চ মোক্ষঃ নিরর্থকঃ।"












একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ